ঢাকা , শনিবার, ২৪ মে ২০২৫ , ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরিবেশ ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি বিবেচনায় ১৪৪টি সংগঠনের যৌথ আবেদন; নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বা

জোরালো হচ্ছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি।

স্টাফ রিপোর্টার | উম্মাহ২৪.নিউজ
আপলোড সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০৫:৪৭:১৯ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ০৬-০৫-২০২৫ ০৫:৪৭:১৯ অপরাহ্ন
জোরালো হচ্ছে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি।

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়িতে ওরিয়ন গ্রুপের প্রস্তাবিত ৬৩৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের দাবি জোরালো হয়েছে। পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠনগুলোর মতে, এই প্রকল্পটি জলবায়ু পরিবর্তন, জনস্বাস্থ্য এবং অর্থনীতির জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করবে।

গত ৬ মে (মঙ্গলবার) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিবেশ ও উন্নয়ন বিষয়ক কর্মজোট (বিডব্লিউজিইডি), উপকূলীয় জীবনযাত্রা ও পরিবেশ কর্মজোট (ক্লিন), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), প্রতিবেশ ও উন্নয়ন ফোরাম (এফইডি), মহেশখালী জনসুরক্ষা মঞ্চ এবং সংশপ্তকসহ ১৪৪টি সংগঠন এই দাবি জানায়। 

সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়:

  1. ওরিয়ন মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (EIA) বাতিল।

  2. ওরিয়নের সঙ্গে ২০১৩ সালের পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) চুক্তি বাতিল।

  3. রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে ওরিয়ন পাওয়ারকে প্রদত্ত ১০,৫৭৯ কোটি টাকার ঋণ বাতিল।

  4. কয়লা প্রকল্পের ইজারা বাতিল করে নবায়নযোগ্য সৌর ও বায়ু প্রকল্প গ্রহণ।

  5. জীবাশ্ম জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন বন্ধ ঘোষণা।

বিডব্লিউজিইডির সদস্য সচিব হাসান মেহেদী বলেন, বিতর্কিত বিদ্যুৎ-জ্বালানি দ্রুত সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় ২০১৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সরকার ওরিয়ন গ্রুপকে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় ৬৩৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা-বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সুযোগ দেয়। ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও ওরিয়ন পাওয়ার ইউনিট-২ ঢাকা লিমিটেডের মধ্যে বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তি (PPA) স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২০ সালের জানুয়ারির মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা থাকলেও, নির্ধারিত সময়ে নির্মাণ কাজ শুরু না হওয়ায় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিডিবি প্রকল্পটি মাতারবাড়ি এলাকায় সরিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেয় এবং ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধি করে।

পরবর্তীতে, ২০২৪ সালের জুলাইতে আবারও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০৩০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। হাসান মেহেদী বলেন, এই এক্সটেনশন না দিলে চুক্তিটি আপনা-আপনি বাতিল হয়ে যেত। তিনি আরও বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে বছরে ৪.৬১ লাখ টন কার্বন ডাই-অক্সাইডসহ বিপুল পরিমাণ দূষণকারী গ্যাস, ফ্লাই অ্যাশ ও বটম অ্যাশ নির্গত হবে, যা স্থানীয় জনস্বাস্থ্য, জীববৈচিত্র্য ও সামুদ্রিক পরিবেশের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে। 

অর্থনৈতিক দিক থেকে, বছরে ১,৫৮৭ কোটি টাকা মূল্যের কয়লা আমদানি এবং ৩,০৫৯ কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের ফলে জাতীয় অর্থনীতি ও রিজার্ভে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি হবে। এছাড়া, প্রকল্পের কারণে স্থানীয় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে এবং স্থানীয় বাসিন্দারা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।

পরিবেশবাদীরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন, মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি বাতিল করে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে মনোযোগ দেওয়া হোক। তারা বলছেন, সোলার ও উইন্ড পাওয়ার বাংলাদেশের জন্য আরও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প হতে পারে।

সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই দাবির বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে, বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি বাতিলের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।


নিউজটি আপডেট করেছেন : NewsUPload

কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ